তামাদি আইনের প্রাথমিক আলোচনা :-
তামাদি শব্দটি একটি আরবী শব্দ। এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাঁধা প্রাপ্ত হওয়া, বিলুপ্ত হওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া। আর আইন শব্দটিও একটি আরবী শব্দ, যা ”আইনুন” শব্দ হতে গৃহীত। এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নিয়ম কানুন বা আইন। আর দুটি শব্দ মিলে হয়েছে তামাদি আইন। যা বর্তমানে বাংলাদেশে তামাদি আইন-১৯০৮ নামে পরিচিত। ১৮৫৯ সালের আগে ভারত বর্ষে একক কোন তামাদি আইন ছিলনা। কোম্পানি আদালতে প্রযোজ্য বিভিন্ন ধরনের আইন যা তামাদি আইনের সাথে জড়িত ছিল। আর তা তিনটি মফস্বল এলাকায় বলবৎ ছিল। সেই সব আইনের মধ্যে অন্যতম ছিল লর্ড কর্ণওয়ালিশের সূর্য্যাস্ত আইন। ”সূর্য্যাস্ত আইন” হচ্ছে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার আগেই জমিদারী খাজনা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় জমিদারী বাতিল হয়ে যাবে। এ ধারনা থেকেই মূলত সূর্য্যাস্ত আইনের জন্ম। ১৭৯৩ সালে তামাদি আইন প্রথম ইংরেজিতে প্রবর্তন হয়। কিন্তু তখন তার আইন হিসেবে পূর্ণ মর্যাদা ছিলনা। ১৮৫৯ সালে প্রথম তামাদি আইন পাশ করা হয়। আইনটি ১৮৬২ সালে প্রথম কার্যকর হয়। ১৮৫৯ সালের আইনটি আবার ১৮৬৩ সালে নতুনভাবে বিধিবদ্ধ হয় যা ১৮৭১ সালে তামাদি আইন হিসেবে প্রবর্তন হয়। ১৮৭১ সালের আইনে সরকার কর্তৃক যে কোন মামলা দায়েরের সময়সীমা ছিল ৬০বছর। এই আইনটিকে পরিমার্জন করে ১৮৭৭ সালে পূনরায় প্রবর্তন করা হয়। সর্বশেষ ১৯০৮ সালে আইনটিকে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে প্রবর্তন করা হয় যা ১৯০৯ সালের ৯ নং আইন হিসবে গন্য করা হয়। এই আইনটিই বর্তমান বাংলাদেশে কার্যকর তামাদি আইন হিসেব বলবৎ আছে।
➽ বিশ্লেষণ ও সার-সংক্ষেপ :-
· ➤ 'তামাদি’ শব্দটি আরবী শব্দ থেকে এসছে।
· ➤ এই আইন লর্ড কর্ণওয়ালিশের সূর্য্যাস্ত আইন থেকে সূত্রপাত হয়েছে।
· ➤ ১৭৯৩ সালে প্রথম ইংরেজিতে লিপিবদ্ধ হয়।
· ➤ ১৮৫৯ সালে প্রথম আইন হিসেবে প্রবর্তন হয়।
· ➤ ১৮৬২ সালে প্রথম কার্যকর হয়।
· ➤ ১৮৬৩ সালে আইনটি নতুন আকারে বিধিবদ্ধ হয়। কিন্তু....
· ➤ আইনটি ১৮৭১ সালে কার্যকর হয়।
· ➤ ১৮৭১ সালের তামাদি আইনে সরকার কর্তৃক মামলা দায়েরের সময়সীমা ছিল ৬০ বছর।
· ➤ ১৮৭৭ সালে আইনটি আবারো নতুনভাবে কার্যকর করা হয়।
· ➤ সর্বশেষ পরিমার্জন করে ১৯০৮ সালে পূনরায় কার্যকর করা হয়। যা....
· ➤ ১৯০৮ সালের ৯ নং আইন হিসেবে পরিচিত।
· ➤ ১৯০৯ সালে ১লা জানুয়ারী কার্যকর হয়।
· ➤ বর্তমান বাংলাদেশে ১৯০৮ সালের তামাদি আইনটিই বলবৎ আছে।
➽ আইন পরিচিতি :-
- নাম :- তামাদি
আইন-১৯০৮
- কার্যকর কাল :- ১৯০৯ সালের ১ লা জানুয়ারী।
- আইনের ধরন :- পদ্ধতিগত আইন বা বিধিবদ্ধ আইন (Procedural Law)।
- আইনটির কাজ :- তামাদি
আইন নতুন
কোন অধিকার
সৃষ্টি করেনা।
এটি অধিকার
বা স্বত্ব
আদায়ের সময়সীমাকে
নির্দিষ্ট করে
দেয়।
- প্রযোজ্যতা :- তামাদি আইন...(১) দেওয়ানী মূল মামলা [Suit], আপীল [Appeal], রিভিউ [Review] ও আবেদন [Application] এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (২) ফৌজদারী মূল মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে ফৌজদারী মামলার আপীল [Appeal] ও দরখাস্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
- তামাদি গণনা :- তামাদির
মেয়াদ গণনা
করা হয়
বাদীর উপর।
এমনকি বিবাদী
যদি তামাদির
প্রশ্ন নাও
তোলে তবুও
আদালত তামাদি
মেয়াদোত্তীর্ণ মামলা
খারিজ করে
দিবে।
- তামাদি গণনার শুরুকাল :- তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হয় মামলার কারণ থেকে। গণনা শুরু হয় ১ম দিন বাদ দিয়ে। গণনা পদ্ধতিতে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়।
- ধারা সংখ্যা :- তামাদি আইনে ধারার সংখ্যা মোট ২৯ টি। পূর্বে ছিল ৩২ টি। ৩০ থেকে ৩২ এই ৩ টি বাতিল করা হয়েছে।
- ধারা ভিত্তিক বিভাজন :- ৩
থেকে ২৫
ধারায় তামাদির
মেয়াদ ও
গণনার পদ্ধতি
আলোচনা করা
হয়েছে। ২৬
থেকে ২৮
ধারায় প্রেসক্রিপশন
(Prescription) ও
অ্যাকুইজিশন (Acquisition) নিয়ে
আলোচনা করা
হয়েছে।
- তফসিল :- মোট তফসিল ৩টি। ১ম টি ছাড়া বাকি ২ টি বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে তফসিল ১টি যাতে ১৮৩ টি অনুচ্ছেদ আছে।
➽ তামাদি আইনের সংশোধন :-
➨ ২০০৪ সালের ২৮ নং আইন দ্বারা সর্বশেষ (১ম তফসিলের) ১১৩ ও ১১৪ অনুচ্ছেদ দুইটি সংশোধন করা হয়।
১. অনুচ্ছেদ ১১৩ :- চুক্তি প্রবলের মোকদ্দমার তামাদি মেয়াদ পূর্বে ছিল ৩ বছর। আর সংশোধনের পর বর্তমান মেয়াদ ১ বছর।
২. অনুচ্ছেদ ১১৪ :- চুক্তি প্রত্যাহারের মোকদ্দমার তামাদি মেয়াদ পূর্বে ছিল ৩ বছর। আর সংশোধনের পর বর্তমান মেয়াদ ১ বছর।
বিগত সালের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নাবলী
১. তামাদি
আইন সর্বপ্রথম
আইনে পরিণত
হয়- [অ্যাডভোকেট অন্তর্ভূক্তি পরিক্ষা (MCQ) ২০১৩]
(ক) ১৮৫৯
সালে।
(খ) ১৮৬২ সালে।
(গ) ১৮৭১
সালে।
(ঘ) ১৯০৮ সালে। উত্তর :- (ক)
২. দেওয়ানি
মামলায় তামাদির
বিষয়টি- [১০ম জুডিসিয়াল সার্ভিস
পরিক্ষা (MCQ)-২০১৫]
(ক) আইন ও ঘটনার মিশ্র
প্রশ্ন
(খ) আইনের প্রশ্ন।
(গ) ঘটনার
প্রশ্ন।
(ঘ) অধিকারের প্রশ্ন। উত্তর :- (ক)
আত্ম অনুশীলন
১. তামাদি আইন কত সালের?
(ক) ১৯০৬
সালের।
(খ) ১৯০৮ সালের।
(গ) ১৯০৯
সালের।
(ঘ) ১৮৭২ সালের। উত্তর :- (খ)
২. তামাদি
আইন একটি-
(ক) মামলা
দায়েরের মেয়াদ
সম্পর্কিত আইন।
(খ) পদ্ধতিগত আইন।
(গ) মূল আইন।
(ঘ) অধিকার সৃষ্টিকারী আইন। উত্তর :- (খ)
৩. তামাদি
আইন কত নং আইন?
(ক) ১৯০৮
সালের ৯ নং আইন।
(খ) ১৯০৮ সালের
১০ নং আইন।
(গ) ১৯০৯
সালের ৯ নং আইন।
(ঘ) ১৯০৯ সালের
১০ নং আইন। উত্তর :- (ক)
৪. তামাদি
আইন সর্বপ্রথম
কত সালে
কার্যকর হয়?
(ক) ১৯০৮ সালের
১লা জানুয়ারী।
(খ) ১৯০৯ সালের ১লা জানুয়ারী।
(গ) ১৮৬২
সালে।
(ঘ) ১৮৫৯ সালে। উত্তর :- (গ)
৫. বর্তমান
বাংলাদেশে বলবৎ তামাদি আইন-১৯০৮
কার্যকর হয় কত সালে?
(ক) ১৯০৬
সালের ১লা জানুয়ারী।
(খ) ১৯০৭ সালের ১লা জানুয়ারী।
(গ) ১৯০৮
সালের ১লা জানুয়ারী।
(ঘ) ১৯০৯ সালের ১ লা জানুয়ারী। উত্তর :- (ঘ)
৬. তামাদি
আইন-
(ক) প্রতিকারকে বারিত করে।
(খ) অধিকারকে বারিত করেনা।
(গ) স্বত্ব
আদায়ের সময়সীমাকে
নির্দিষ্ট করে।
(ঘ) সবগুলি। উত্তর :- (ঘ)
৭. তামাদি
আইনে মোট কতটি ধারা আছে?
(ক) ২৮ টি।
(খ) ২৯ টি।
(গ) ৩০ টি।
(ঘ) ৩২ টি। উত্তর :- (খ)
৮. তামাদি
আইনে কতটি
তফসিল বলবৎ
আছে?
(ক) ৩ টি।
(খ) ৪ টি।
(গ) ৫ টি।
(ঘ) ১ টি। উত্তর
:- (ঘ)
৯. তামাদি আইনে মোট কতটি অনুচ্ছেদ আছে?
(ক) ১৮২ টি।
(খ) ১৮৩ টি।
(গ) ১৮৪ টি।
(ঘ) ১৮৫ টি। উত্তর
:- (খ)
১০. মোকদ্দমা,
আপীল ও আবেদন দায়েরের সময়সীমা
উল্লেখ আছে-
(ক) প্রথম তফসিলে।
(খ) দ্বিতীয় তফসিলে।
(গ) তৃতীয়
তফসিলে।
(গ) চতূর্থ তফসিলে। উত্তর :- (ক)
১১. তামাদি
আইন প্রযোজ্য-
(ক) দেওয়ানী
মূল মোকদ্দমা
ও আপীলে
(খ) রিভিউ ও আবেদনে।
(গ) ফৌজদারী
মামলায় আপীলে।
(ঘ) সবগুলোতে উত্তর :- (ঘ)এই পেজটির PDF ফাইল পেতে এখানে Click করুন।
No comments